-বণিক বার্তা ডেস্ক
ইন্টারনেট মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং এর বহুমুখী ব্যবহার উপযোগিতার ফলে প্রতিনিয়তই সেবাটির গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। ইন্টারনেট সেবার প্রসারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। বিশ্বনেতাদের পক্ষ থেকেও তথ্যপ্রযুক্তিকে দিনবদলের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বলা হচ্ছে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে কেন্দ্র করে গ্রাহকের গোপনীয়তা এবং তথ্যনিরাপত্তার বিষয়টি বর্তমানে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইন্টারনেট এবং টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক তথ্যের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশনের ‘র্যাংকিং ডিজিটাল রাইটস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে আসে। এটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশিত প্রথম করপোরেট জবাবদিহিতা সূচক প্রতিবেদন। খবর এএফপি।
র্যাংকিং ডিজিটাল রাইটস আটটি ইন্টারনেট এবং আটটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান নিয়ে মোট ১৬টি শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর দুই বছরের বেশি সময় ধরে জরিপ চালিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যাতে অনলাইনকেন্দ্রিক সেবাদাতা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই গ্রাহক তথ্যনিরাপত্তা ইস্যুতে কম পয়েন্ট পেয়েছে। মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা বিষয়ক অঙ্গীকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা এবং ব্যবহারকারীর তথ্য রক্ষাকে মানদণ্ড বিবেচনা করে পয়েন্ট বণ্টন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে র্যাংকিং ডিজিটাল রাইটস প্রজেক্টের পরিচালক রেবেকা ম্যাকিনন বলেন, আমরা প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে যখন র্যাংকিং করি, তখন পরিষ্কার হলো যে, কোনো প্রতিষ্ঠানই বিজেতা নয়। অর্থাত্ গ্রাহক তথ্যনিরাপত্তা ইস্যুতে বেশির ভাগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই নাজুক অবস্থানে রয়েছে। আমরা আশা করছি, করপোরেট জবাবদিহিতা সূচক এ প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপত্তা ইস্যুতে আরো স্বচ্ছ হওয়ার দিকে পরিচালিত করবে। যা তথ্যপ্রযুক্তির গ্রাহকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে যে, তারা আসলে কোন উপায়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।
প্রতিবেদনটিতে শূন্য থেকে ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে র্যাংকিং করা হয়। যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয় সেগুলোর মধ্যে ৬৫ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে প্রতিবেদনের শীর্ষে রয়েছে ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান গুগল। অন্যদিকে ইয়াহু ৫৮ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ৫৬ ও ৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে মাইক্রোসফট ও টুইটার। এছাড়া ১৬ ও ১৩ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবার শেষে রয়েছে যথাক্রমে চীনের টেনসেন্ট এবং রাশিয়ার মেইল ডট আরইউ।
অন্যদিকে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্রিটেনের ভোডাফোন গ্রাহক তথ্যনিরাপত্তা ইস্যুতে ৫৪ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এটিঅ্যান্ডটি। টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৬ ও ১৪ শতাংশ পয়েন্ট অর্জন করে সবার শেষে রয়েছে মালয়েশিয়ার আজিয়াটা এবং মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এতিসালাত গ্রুপ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবাদাতা মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু ছয়টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহক তথ্যনিরাপত্তা ইস্যুতে ৫০ শতাংশের বেশি পয়েন্ট অর্জন করছে। এছাড়া সাতটি প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশের কম পয়েন্ট পেয়েছে। বিষয়টিকে তথ্যনিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা ইস্যুতে গ্রাহকদের প্রতি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রদ্ধার গুরুতর ঘাটতি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই কোন উপায়ে গ্রাহক তথ্য সংগ্রহ করছে, সংগৃহীত তথ্যের ব্যবহার এবং শেয়ার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশে অন্তর্মুখী মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। এমনকি যেসব প্রতিষ্ঠান বিষয়গুলো গ্রাহকদের কাছে স্বচ্ছ করতে আগ্রহী, তারাও অনেক সময় বিভিন্ন নীতির কারণে তা পারছে না। ফলে একজন গ্রাহক সম্পর্কে ঠিক কোন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং কী উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে ও কার সঙ্গে তা শেয়ার করা হচ্ছে সেটা অপ্রকাশিতই থেকে যাচ্ছে।
অবশ্য প্রতিবেদনটিতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেশকিছু দেশের আইন এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে দোষারোপ করা হয়েছে। নেতিবাচক আইন ও অবৈধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণেও অনেক সময় গ্রাহকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যনিরাপত্তা বিষয়ে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
Source