খবরের শিরোনামঃ উজবেকিস্তানে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাচ্ছে ভিম্পেলকম

খবরের তারিখঃ ২০১৫-১১-১৬

-বাণিজ্য ডেস্ক
জরিমানার ১০০ কোটি ডলার প্রস্তুত রেখেছে বাংলালিংকের মালিকপক্ষ ঘুষ প্রদান করে ব্যবসায় প্রবেশ করে উজবেকিস্তানে আইনি জটিলতায় জড়িয়ে গেছে বাংলালিংকের মালিকপক্ষ ভিম্পেলকম। বিদেশি মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ নিয়েছেন উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইসলাম করিমভের মেয়ে গুলনারা করিমভা। উজবেকিস্তানের লোভনীয় ফোন ব্যবসায় প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বড় বড় মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর কাছ থেকে এ অর্থ নিয়েছেন বলে এক তদন্তে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে এ উজবেককন্যার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ নেওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়। আর এই অর্থ প্রদান করতে পিছপা ভিম্পেলকম। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) কর্তৃক এক রিপোর্টে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, করিমভা নগদ অর্থ গ্রহণের পাশাপাশি শেয়ারও নিয়েছেন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এবং রাশিয়ান টেলিকম কম্পানি টেলিয়াসনেরা, এমটিএস এবং আলফা টেলিকমের কাছ থেকে। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, করিমভা কম্পানিগুলোর কাছ থেকে পার্সেন্টেজ চাওয়ার পাশাপাশি জোর করে নগদ অর্থও আদায় করেছেন। যা তাঁর ব্যক্তিগত সেবা ও লবিং বাবদ নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, করিমভা এসব কম্পানিতে কোনো অর্থ না দিয়েই ২৬ শতাংশ পর্যন্ত মালিকানা দাবি করেছেন। অনুসন্ধানকারী দল জানায়, তাদের কাছে প্রমাণ আছে নরওয়ের টেলিকম কম্পানি টেলিয়াসনেরা করিমভাকে ৩৮ কোটি ১০ লাখ ডলার দিয়েছে। আরো সাত কোটি ৫০ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উজবেকিস্তানের ফোন ব্যবসায় সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে। রাশিয়ান কম্পানি এমটিএস দিয়েছে ৩৫ কোটি ডলার। এর পাশাপাশি রাশিয়ার ভিম্পেলকম দিয়েছে ১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ওসিসিআরপি জানায়, এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেরও সহায়তা ছিল। মূলত করিমভার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ জনসমক্ষে উঠে আসে ২০১২ সালে টেলিয়াসনেরার একটি সন্দেহজনক লেনদেন থেকে। সন্দেহজনক অর্থ লেনদেনের অভিযোগে টেলিয়াসনেরার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেদারল্যান্ডসে তদন্ত হয়। যদিও কম্পানিটি ঘুষ প্রদান বা অর্থপাচারের যেকোনো অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে কম্পানিটি স্বীকার করেছে, তাদের কিছু লেনদেন সুষ্ঠু ব্যবসায়িক নিয়মের মধ্যে পড়েনি। অন্যদিকে রাশিয়ার কম্পানি এমটিএস, ভিম্পেলকম এবং আলফা টেলিকমও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত রাশিয়ান কম্পানি ভিম্পেলকমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এবং ডাচ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ অনুযায়ী বাংলালিংকের মূল কম্পানি ভিম্পেলকম উজবেকিস্তানে লাইসেন্স পেতে ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেয় উজবেক প্রেসিডেন্টের কন্যাকে। গত বছর ভিম্পেলকমের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ। এরপর ভিম্পেলকমের অফিসেও হানা দেয় পুলিশ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করে। এ নিয়ে তিন বছর ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এসইসি। এই তদন্তে উঠে এসেছে প্রমাণাদি। ভিম্পেলকমের সাবেক সিইও জো লন্ডার সম্প্রতি অসলোতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ঘুষ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে। ঘুষ প্রদান অভিযোগের ঘটনায় ভিম্পেলকম থেকে মোট বিনিয়োগ ৩৩ শতাংশ বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে টেলিনর। ইতিমধ্যে এই কেলেঙ্কারি ইস্যুতে টেলিনরের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া ভিম্পেলকমের মালিক ওগি ফাবেলা সম্প্রতি বাংলাদেশে এসে সরকারের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে গেছেন। এসব বিষয়ে ভিম্পেলকমের চিফ ফিন্যানশিয়াল অফিসার অ্যান্ড্রু ড্যাভিস বলেন, 'ঘুষ প্রদান নিয়ে যে তদন্ত হচ্ছে এ ব্যাপারে আমাদের দিক থেকে এখনো কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তবে ভিম্পেলকমের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিন ইভস চার্লিয়ার বলেন, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই আমরা সব দেশে নৈতিক মানদণ্ড বজায় রেখেই ব্যবসা পরিচালনা করতে চাই। তদন্তের ব্যাপারেও আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করছি এবং এ বিষয়টি শীর্ষ এজেন্ডা হিসেবে আমাদের বোর্ড ও ম্যানেজমেন্টের আলোচনায়ও রয়েছে। এদিকে ঘুষ প্রদান অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো ধরনের জরিমানার জন্য অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ১০০ কোটি ডলার প্রস্তুত রেখেছে ভিম্পেলকম। গার্ডিয়ান, রয়টার্স।

Source