-বণিক বার্তা ডেস্ক
সেলফোনে গণহারে নজরদারির কৌশল থেকে সরে আসছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)। এ ঘোষণা এসেছে আগেই। এবার কার্যকরের পালা। আজ থেকেই সংস্থাটি তাদের ব্যাপক নজরদারি কার্যক্রম বন্ধ করছে। তারা এখন সন্দেহের ক্ষেত্রে প্রায় নিশ্চিত হওয়া লক্ষ্যতে নজরদারি চালাতে পারবে। গত শুক্রবার ওবামা প্রশাসন এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। খবর রয়টার্স।
২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা। এনএসএর এক কর্মী চাকরি ছেড়ে পাড়ি জমান হংকংয়ে। নাম এডওয়ার্ড স্নোডেন। হংকংয়ে থাকা অবস্থায় তিনি তার সাবেক কর্মস্থলের বিভিন্ন গোপন তথ্য গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ফাঁস করেন। এ নথিগুলো এনএসএ ও যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের দরবারে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। সে সময়ই প্রথম জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি নিজ দেশের নাগরিকদের ওপরও নজরদারি চালাচ্ছে। এমনকি তারা মিত্র দেশের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকদেরও নজরদারি কার্যক্রমের আওতার বাইরে রাখেনি। নথি ফাঁস করার কিছুদিনের মধ্যে স্নোডেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে যান রাশিয়ায়। সেখান থেকেই বিভিন্ন সময় তিনি এনএসএর ব্যাপক নজরদারির তথ্য ফাঁস করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে একের পর এক প্রশ্নের সম্মুখীন করছে।
এ পরিস্থিতিতে এত দিন পর ওবামা প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। আজ থেকে এনএসএ মার্কিন নাগরিকদের ওপর ব্যাপক নজরদারি প্রবণতা থেকে সরে আসবে। বিবৃতিতে ওবামা প্রশাসন জানায়, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের পর থেকে এনএসএ তাদের বর্তমান কৌশল থেকে সরে আসবে। এর পরিবর্তে গোয়েন্দারা সন্দেহের ক্ষেত্রে প্রায় নিশ্চিত লক্ষ্যে নজরদারি করবে।
ব্যাপক নজরদারি বন্ধের এ ঘটনা প্রাইভেসি নিয়ে লড়াই করে আসা মানুষদের জন্য বড় জয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। কারণ এনএসএর নজরদারিতে দেশটির প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সরাসরি জড়িত থাকা-সংশ্লিষ্ট কিছু নথি ফাঁস করেছিলেন স্নোডেন। এবার এনএসএ ব্যাপক নজরদারি বন্ধ করলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে সন্দেহ করারও আর কোনো যৌক্তিক কারণ থাকছে না। উল্লেখ্য, স্নোডেন তার নথিতে এনএসএর সঙ্গে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জড়িত থাকার কথা জানালেও তারা শুরু থেকেই বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।
এ মাসেই প্যারিসে ঘটে গেল স্মরণকালের অন্যতম বড় সন্ত্রাসী হামলা। এতে হতাহতের সংখ্যা কয়েকশ। ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী হামলার এ সময়ে নজরদারিতে প্রতিবন্ধকতা ক্ষতির পরিমাণ বাড়াতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। তবে এক্ষেত্রে কার্যকর পন্থা সাধারণের প্রাইভেসি মেনে চলে অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারবে বলেই মনে করছেন নজরদারি বন্ধের পক্ষের মানুষরা।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে নজরদারি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করে। কিন্তু প্রায় আড়াই বছর আগে স্নোডেনের ফাঁস করা নথির কারণে এতে বাধা পড়ে। ছয় মাস আগে নতুন এক আইনের মাধ্যমে এনএসএর নজরদারিতে লাগাম টানা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডম অ্যাক্ট অনুযায়ী, এনএসএ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করতে বড় পরিসরে নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। কোনো সংস্থা গ্রাহকের ওপর নজরদারি করতে ভেরাইজন কমিউনিকেশনসের মতো প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিতে চাইলে আদালতের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। আর কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় মাস নজরদারির সুযোগ পাবে গোয়েন্দা সংস্থা।
Source