-বণিক বার্তা ডেস্ক
কয়েক মাস ধরে নকিয়া, সিপ্রোল্যাব, সিসভেল ও কোরের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতীয় সেলফোন নির্মাতাদের কাছে রয়্যালটি দাবি করে আসছে। ভারতে সেলফোনের বাজার বাড়ার সঙ্গে এ খাতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমও বেড়েছে। তারা নিত্যনতুন নকশা ও প্রযুক্তির ডিভাইস উন্মোচন করছে; যার অধিকাংশ পেটেন্ট বিদেশী প্রতিষ্ঠানের। সেলফোনে রয়্যালটি প্রদান ভারতের সংশ্লিষ্ট বাজারের গতি কমাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর ইকোনমিক টাইমস।
ভারতের কয়েক কোটি মানুষের হাতে পৌঁছে গেছে সেলফোন। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যকেরই বাজারটির ভবিষ্যত্ নিয়ে ধারণা রয়েছে। সেলফোনের বাজার দেশটিতে যত বড় হচ্ছে, বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে রয়্যালটি ইস্যুতে সম্পর্ক তত বেশি জটিল হচ্ছে। একপর্যায়ে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশীদের রয়্যালটি দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে ডিভাইসের দামে যে নিম্নগামী রূপ রয়েছে, তাতে পরিবর্তন আসবে। ডিভাইসের দাম বাড়বে। এক কথায় বলা যায়, দেশটির সেলফোন বাজারের চেহারা তখন ভিন্ন হবে। এখন খাতটির যে জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে, তাতে রয়্যালটি ইস্যু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।
প্রতিটি সেলফোনকেই বেশকিছু প্রযুক্তির পেটেন্টের ব্ল্যাকবক্স হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এ পেটেন্টের অনেকগুলোর মালিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি। এখন তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্ সেলফোন বাজার থেকে রয়্যালটি দাবি করতে শুরু করেছে। গত কয়েক মাসে মাইক্রোম্যাক্স, লাভা, ইন্টেক্স, কার্বন ও আইবলের মতো ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পেটেন্টের রয়্যালটি দাবি করে আসছে নকিয়া, সিপ্রোল্যাব, সিসভেল ও কোরের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ প্রবণতায় ভারতের কোম্পানিগুলো তাদের ডিভাইসের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে। ফলে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাজারে প্রতিযোগিতা করার বর্তমান প্রবণতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয় বছর দুই আগে। সুইডিশ জায়ান্ট এরিকসন ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রয়্যালটি আদায়ে সে সময় আদালতের শরণাপন্ন হয়। তখন ঘটনাটিকে বিদেশী ও স্থানীয় দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বিবেচনা করা হলেও এখন তা বড় আকার ধারণ করেছে। সে সময় এরিকসন মামলায় জিতে যাওয়ায় এখন বিশ্বের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আগ্রহী হয়ে রয়্যালটি দাবি করতে শুরু করেছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠান কোয়ালকমও একইভাবে রয়্যালটি
দাবি করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান সেল্যুলার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ মোহিন্দ্র বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান হ্যান্ডসেট নির্মাতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। এ মুহূর্তে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা সবসময়ই যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তার জন্য রয়্যালটি প্রদানের পক্ষে। কিন্তু পুরো ডিভাইসের জন্য রয়্যালটির দেয়ার পক্ষে আমরা নই।’ রয়্যালটি দেয়া শুরু করলে প্রতিষ্ঠানটির উত্পাদন ব্যয় বাড়বে। এতে গ্রাহকরাও আর আগের দামে ডিভাইস পাবেন না। এ পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থেই ডিভাইসপ্রতি রয়্যালটির সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করা জরুরি।
চীনের সেলফোন নির্মাতারা প্রতিটি হ্যান্ডসেটে ব্যবহূত চিপের জন্য নামমাত্র রয়্যালটি দেয়। একইভাবে অন্যান্য প্রযুক্তির জন্যও রয়্যালটি দেয় তারা। কিন্তু পুরো ডিভাইসের ওপর কখনই তারা রয়্যালটি দেয় না। ভারতের সেলফোন নির্মাতারা এখন তাদের উত্পাদিত ডিভাইসের জন্য কী পরিমাণ রয়্যালটি নির্ধারণ করা হয়, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। যদি কোনো কারণে এ ধরনের মামলা আদালতে গড়ায় এবং এজন্য পেটেন্টর হিসাব করা হয়, সেক্ষেত্রে ভারতের হ্যান্ডসেট নির্মাতাদের জন্য সামনের দিনগুলোয় খারাপ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবে বলেই আশা করছেন ডিভাইস নির্মাতারা। বিষয়টি নিয়ে কোনো পক্ষই এখনো নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে রয়্যালটি প্রদান ভারতের হ্যান্ডসেট বাজারের বর্তমান গতিকে প্রভাবিত করবে বলেই মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
Source