-
ভারতজুড়ে গ্রামাঞ্চলে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও সেবা বিক্রিতে নারী কর্মীদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াচ্ছে টেলিনর ও ভোডাফোনের মতো টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা কোম্পানি। এজন্য সাম্প্রতিক সময় দেশটির টেলিযোগাযোগ সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলগুলোয় নারী কর্মীদের পাঠানোর প্রতি ঝোঁক বেড়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর। খবর দি ইকোনমিক টাইমস।
ভারত টেলিকম প্রযুক্তি খাতের শীর্ষস্থানীয় বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম। ডিভাইসের সহজলভ্যতা এবং শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার সুবাদে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে দেশটির সংশ্লিষ্ট খাত। কিন্তু বিপুল জনসংখ্যার দেশটির অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে এখনো টেলিযোগাযোগ সেবা পৌঁছায়নি। তাই সুবিধাবঞ্চিত এ অঞ্চলগুলোয় এখন ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং সেবা বিক্রিতে কাজ করছে টেলিনর ও ভোডাফোনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোয় নারী কর্মীদের পাঠানোর প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে দেশটির টেলিযোগাযোগ সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের সামাজিকভাবে পুরুষদের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ। ওই অঞ্চলগুলোয় স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা সম্প্রসারণে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বিশেষ করে এ ধরনের গ্রামীণ এলাকায় সেবা বিক্রিতে নারী কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া নারী কর্মীদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠাতে আরো কিছু পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ বিষয়ে ভোডাফোন ইন্ডিয়ার মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক অশোক রামাচন্দ্রন বলেন, ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলগুলোয় গ্রাহক বাড়াতে যেসব নারী কর্মী কাজ করছেন, সম্প্রতি তাদের সুবিধার্থে প্রতি ৩০ কিলোমিটার পর শৌচাগার স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশকরা। যাতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোয় নিয়োজিত কর্মীরা স্বচ্ছন্দে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। যদিও শৌচাগার স্থাপনের এ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি পদক্ষেপের অংশ নয়।
এছাড়া তিনি বলেন, গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও সেবা বিক্রি বাড়াতে নিয়োজিত নারী কর্মীদের দেখভালের জন্য এটি একটি সাধারণ উদাহরণ। ভোডাফোন ইন্ডিয়ার এ কর্মকর্তা চলতি বছর শেষে আদিত্য বিড়লা গ্রুপে যোগ দিতে যাচ্ছেন বলে ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, ভারতের পশ্চাৎপদ প্রদেশ, উপকূল ও নদীতীরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা প্রচুর। এ অঞ্চলগুলোর নারীরা পুরুষ বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো সেবার বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন না। এর পেছনে বড় অন্তরায় সামাজিক সংস্কার। এ কারণে দেশটির মোট জনসংখ্যার এক বৃহৎ গোষ্ঠী এখনো সেলফোন ব্যবহার করে না। গত জুন শেষের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে শতকোটির কিছু কম মানুষ সেলফোন ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের টেলিযোগাযোগ সেবা থেকে বঞ্চিত মানুষদের সেবার আওতায় আনতে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর নারী কর্মী পাঠানোর যে প্রবণতা, তা ইতিবাচক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত বছর পরিচালিত গুগলের এক জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের মোট ২৩ কোটি ৮০ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৩০ শতাংশ নারী। ছয় থেকে আট কোটি বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন প্রায় দুই লাখ নারী সেবাটি ব্যবহার করছেন।
ইউনিনর বা বর্তমানে টেলিনর ইন্ডিয়া গত বছর এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছিল। সে সময় প্রতিষ্ঠানটি আলিগড়ে নারী প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছিল শিক্ষার আলো ছড়াতে। বিশেষ করে ওই অঞ্চলের যেসব স্থানে স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে নারীদের সেলফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একই সঙ্গে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের খুঁটিনাটি জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে ৫০০ নারী কর্মী নিয়োগ দিয়েছে টেলিনর ইন্ডিয়া। টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী এক বড় জনগোষ্ঠীকে সেলফোন সেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলেই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
Source